বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমরা চাই দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ লেনদেন ব্যবস্থা। এই চাহিদা থেকেই এসেছে NFC (Near Field Communication) প্রযুক্তি। এটি এমন এক ধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম, যা মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্বে থাকা দুটি ডিভাইসকে সংযুক্ত করে তথ্য আদান–প্রদান করতে সক্ষম করে। অর্থাৎ, এখন লেনদেনের জন্য শুধু “একটি ট্যাপই যথেষ্ট”। আমরা যদি আমাদের কার্ডের সামনে অথবা পেছনের কোন জায়গায় ওয়াইফাই সিগন্যালের মত চিহ্ন দেখতে পাই তাহলে বুঝে নিতে হবে সেই কার্ডটি এনএফসি সুবিধা সমর্থিত।
এনএফসি কীভাবে কাজ করে?
এনএফসি প্রযুক্তি মূলত Radio Frequency Identification (RFID)–এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যখন আপনার এনএফসি সক্ষম কার্ড, মোবাইল ফোন বা স্মার্টওয়াচ একটি পেমেন্ট টার্মিনালের কাছাকাছি আনা হয়, তখন উভয় ডিভাইসের মধ্যে স্বল্প–দূরত্বের চৌম্বক তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা ট্রান্সফার হয়। যদিও এনএফসি প্রযুক্তিতেও চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা আদান–প্রদান হয়, এটি ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ কার্ডের মতো স্থায়ী ডেটা সংরক্ষণ করে না। বরং প্রতিটি লেনদেনে ডায়নামিক এনক্রিপশন ও টোকেনাইজেশন ব্যবহারের ফলে এটি অনেক বেশি নিরাপদ ও সুরক্ষিত।
তবে চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই, এই ডেটা নিরাপদভাবে এনক্রিপ্টেড থাকে, ফলে লেনদেন সম্পন্ন হয় মুহূর্তেই পিন বা স্লাইড করার প্রয়োজন ছাড়াই।
উদাহরণস্বরূপ, সুপার শপ কেনাকাটার পর পস (POS) মেশিনে শুধু কার্ড বা মোবাইলটি ট্যাপ করলেই পেমেন্ট সম্পন্ন হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে এমাউন্ট পর্যন্ত কোন পিন নাম্বার প্রয়োজন হয় না।
এনএফসি পেমেন্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অনেকে মনে করেন, স্পর্শহীন লেনদেন হয়তো কম নিরাপদ, কিন্তু আসলে এনএফসি লেনদেন অত্যন্ত নিরাপদ। এর প্রধান নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
▣ ডেটা এনক্রিপশন: প্রতিটি লেনদেনের তথ্য এনক্রিপ্টেড কোডে পাঠানো হয়।
▣ সীমিত দূরত্ব: এনএফসি সংযোগ কাজ করে সর্বোচ্চ ৪ সেন্টিমিটার দূরত্বে, যা অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করে।
▣ টোকেনাইজেশন: প্রকৃত কার্ড তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় না, বরং এককালীন ভার্চুয়াল টোকেন ব্যবহৃত হয়।
▣ অথেনটিকেশন: মোবাইল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ফেস আইডি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা পিন নিশ্চিত করে অতিরিক্ত সুরক্ষা।
এনএফসি টেকনোলজির সুবিধা
▣ দ্রুত লেনদেন: কেবল ট্যাপ করলেই পেমেন্ট সম্পন্ন, কোনো কার্ড ইনসার্ট বা স্বাক্ষর প্রয়োজন নেই।
▣ সুবিধাজনক ব্যবহার: কার্ড, মোবাইল, স্মার্টওয়াচ—সবকিছুতেই ব্যবহারযোগ্য।
▣ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা: এনক্রিপশন ও টোকেন সিস্টেমের কারণে ডেটা চুরি প্রায় অসম্ভব।
▣ কনট্যাক্টলেস অভিজ্ঞতা: স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে টাচ–ফ্রি ট্রান্স্যাকশন।
▣ গ্লোবাল এক্সেপ্টেন্স: আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্র্যান্ড যেমন Visa, Mastercard, American Express এখন ব্যাপকভাবে এটি সাপোর্ট করে।
এনএফসি প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্র
▣ ব্যাংক কার্ড পেমেন্ট (Credit/Debit Card Tap & Pay)
▣ মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপস (Google Pay, Apple Pay, Samsung Pay)
▣ ট্রান্সপোর্ট ও টিকিটিং সিস্টেম
▣ অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ও ডিজিটাল আইডি সলিউশন
এনএফসি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী কনট্যাক্টলেস পেমেন্টের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। Mastercard-এর একটি রিপোর্ট (2023) অনুযায়ী, প্রতিদিনের লেনদেনে NFC–ভিত্তিক ট্রান্স্যাকশনের হার ৭০%–এর বেশি। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠান Tap & Pay সুবিধা চালু করেছে, যা ধীরে ধীরে প্রচলিত চিপ ও ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ কার্ডের বিকল্প হয়ে উঠছে।
সুতরাং, এনএফসি টেকনোলজি আমাদের দৈনন্দিন লেনদেনকে করেছে দ্রুত, স্মার্ট ও সম্পূর্ণ স্পর্শহীন। “Tap & Pay” কেবল একটি সুবিধা নয়, বরং এটি হচ্ছে আধুনিক ব্যাংকিং নিরাপত্তা ও সুবিধার নতুন প্রতীক।
