সিটি ব্যাংকের গ্রাহক অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা দায়িত্বশীল প্রশ্ন | City Bank Customer Experience and Accountability

সিটি ব্যাংকের গ্রাহক অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা দায়িত্বশীল প্রশ্ন | City Bank Customer Experience and Accountability


অনিচ্ছা সত্ত্বেও সিটি ব্যাংককে কেন্দ্র করে আবারও লিখতে হচ্ছে। আমি পেশায় একজন কনটেন্ট রাইটার, এবং আমার লেখালেখির বিষয়বস্তু মূলত ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স হলেও আমি নিজেকে এই খাতের এক্সপার্ট মনে করি না। বরং আমি নিজেকে একজন আগ্রহী শিক্ষার্থী হিসেবে দেখি, যে শেখার উদ্দেশ্যেই লিখে এবং অভিজ্ঞতা থেকে বোঝাপড়া বাড়াতে চায়। লেখালেখি আমার কাছে লক্ষ্য নয়, শেখার একটি মাধ্যম মাত্র।

পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিকতার জায়গা থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক ও অগ্রহণযোগ্য গ্রাহকসেবার ত্রুটিগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করছি। এটি কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়; বরং পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং গ্রাহকের ন্যায্য প্রত্যাশার প্রশ্ন উত্থাপন করার একটি দায়িত্বশীল প্রচেষ্টা।

আমার একাউন্টের ডেবিট কার্ড দিয়ে ই-কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) এমন একটি মোবাইল নম্বরে পাঠানো হচ্ছিল, যা বর্তমানে আমার একাউন্টের সাথে সংযুক্ত নয়। তবে একসময় ওই নম্বরটি ব্যবহার করতাম, সম্ভবত সে কারণেই সিস্টেমে সেটি রয়ে গেছে। যদিও আমি কোর ব্যাংকিং সিস্টেমে আমার বর্তমান ও সক্রিয় মোবাইল নম্বরটি যথাযথভাবে আপডেট করেছি, তবুও সিস্টেমজনিত কোনো জটিলতার কারণে ডেবিট কার্ড সংশ্লিষ্ট লেনদেনে OTP বারবার পূর্বের নম্বরে যাচ্ছিল। বিষয়টি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই, অক্টোবর মাসের প্রথম দিকেই আমি সিটি ব্যাংকের কল সেন্টারে যোগাযোগ করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং সমস্যাটি সমাধানের জন্য তারা একটি রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে।

এখানেই ছিল আমার সবচাইতে হতাশা জনক প্রাপ্তি সিটি ব্যাংক থেকে, আমি তাদেরকে জানালাম আমার ডেবিট কার্ডের ই-কমার্স পেমেন্টের ওটিপি পাচ্ছিনা তারা আমাকে করল এসএমএস এলার্ট এর জন্য চার্জ। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করে রাখি, আমি ২০১৫ সাল থেকে সিটি ব্যাংকের সাথে ব্যাংকিং করছি। একাউন্ট খোলার সময় আমি এসএমএস অ্যালার্ট সার্ভিসে ফরমালভাবে সাবস্ক্রাইব করিনি, কারণ সে সময় ব্যাংকের পলিসি অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ছিল। বর্তমানে এটি একটি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস হিসেবে অপশনাল থাকলেও, নতুন করে একাউন্ট খোলা গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ডিফল্টভাবে সক্রিয় করা হয় এবং পরবর্তীতে চাইলে তা বন্ধ করার সুযোগ রাখা হয়, যা একই ব্যাংকের চলমান নীতি। তবে ২০১৫ সালে সিটি ব্যাংকে ডিজিটাল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম সিটিটাচ সেবার জন্য আবেদন করতে হতো নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে, যেখানে ‘এসএমএস অ্যালার্ট’ নামে একটি অপশন ছিল এবং সেটিতে টিক মার্ক করা থাকলে শুধুমাত্র সিটিটাচের বিপরীতে ট্রানজেকশনাল অ্যালার্ট বিনামূল্যে পাওয়া যেত। সেই প্রক্রিয়ার আওতায় আমি এতদিন এই সার্ভিসটি ব্যবহার করে আসছি। 

এখানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অক্টোবর ২০২৫ এর প্রথম প্রথমার্ধে ব্যাংক যেভাবেই হোক আমার কাছ থেকে চার্জ আদায়ের জন্য কৌশল প্রয়োগ করেছে এবং কোনো না কোনো দুর্বল পয়েন্ট খোঁজার চেষ্টা করেছে। কারণ আমি যে অনুরোধটি করেছিলাম, তা ছিল একেবারেই স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট, আমার ডেবিট কার্ডের ওটিপি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান। অথচ সেই রিকুয়েস্টের বাস্তবে এক্সিকিউট না করে আমাকে ট্রানজেকশনাল এসএমএস অ্যালার্ট চার্জ নিয়ে বিতর্কে জড়াতে হয়েছে। ধরেও নিলাম নীতিগতভাবে আমি ওই চার্জের জন্য এলিজিবল ছিলাম, তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, আমার নির্দিষ্ট সার্ভিস রিকুয়েস্ট উপেক্ষা করে শুধুমাত্র চার্জ আদায় করা কি গ্রহণযোগ্য গ্রাহকসেবার উদাহরণ।

তাদের প্রতি আমার একটি ক্ষোভ হয়েছিল যার কারণে সেই সময় আমি আমার একাউন্টের ডেবিট কার্ড এবং চেক বই নষ্ট করে ফেলেছিলাম পরবর্তীতে তা রিপ্লেস করে নিয়েছি।

প্রকৃতপক্ষে, আমি যে সমস্যাটি নিয়ে যোগাযোগ করেছিলাম, সেই সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি দায়িত্বশীলভাবে বিষয়টি দেখেছে, নাকি তারা সম্পূর্ণভাবে উদাসীন ছিল?

কারণ, গত ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পুনরায় ডেবিট কার্ড নিয়ে সেটি একটিভ করে ই-কমার্স লেনদেন করতে গিয়ে আবারও দেখি, আগের মতোই ওটিপি পূর্বের নম্বরে যাচ্ছে। পরবর্তীতে সিটি ব্যাংকের কমপ্লেইন সেলে লিখিতভাবে জানালে এক কার্যদিবসের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হয়, এজন্য আমি ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। তবে ব্যাংকের লিখিত রিপ্লাই ইমেইলে বলা হয়েছে যে, একাধিক ভার্চুয়াল কার্ড ও নম্বর মিসম্যাচের কারণেই এতদিন ওটিপি সমস্যা ছিল। 

এখন, প্রশ্ন হলো, যদি সমস্যার মূল কারণ এটিই হয়ে থাকে, তাহলে অক্টোবরে প্রথমবার বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও কেন তখন কোনো সমাধান করা হয়নি?, কেন গ্রাহককে অপ্রাসঙ্গিক চার্জ নিয়ে বিতর্কে জড়ানো হয়েছে?, এবং কেন এই টেকনিক্যাল ব্যাখ্যাটি তখনই জানানো হয়নি। একই সমস্যার সমাধান যেখানে এক কার্যদিবসে সম্ভব হয়েছে, সেখানে মাসের পর মাস ধরে একজন গ্রাহককে বিভ্রান্ত রাখা এবং তার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি বিষয় উপেক্ষা করা কোনোভাবেই দায়িত্বশীল গ্রাহকসেবার প্রতিফলন হতে পারে না।

এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি আমি এখনও সমস্যাটি লিখিতভাবে না জানাতাম, তাহলে আমার ডেবিট কার্ডের ওটিপি সমস্যা এখনও আগের মতোই থেকে যেত। সাধারণ গ্রাহকদের এখন আর উল্টাপাল্টা কিছু বোঝানোর সুযোগ নেই, কারণ এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগে অধিকাংশ মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন এবং সহজে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। 

আমার পূর্বের সমস্ত কার্ড, যেগুলো আমি এই দশ বছরের মধ্যে নিয়েছি, হারিয়েছি বা রিপ্লেস করেছি, এবং কয়েকবার ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করেছি, সবই ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমি ব্যবহার বন্ধ করার পর অফিসিয়ালি ক্লোজ করেছি। আমার কোনো কার্ডই ব্যবহৃত অবস্থায় অনুপযুক্তভাবে সিস্টেমে পড়ে থাকেনি, এবং আমি প্রতিটি কার্ড শুধুমাত্র প্রয়োজনে ব্যবহার করেছি, প্রয়োজনে বন্ধ করেছি, তবুও সিস্টেমে আগে থাকা ভার্চুয়াল কার্ডগুলো ওটিপি সমস্যা তৈরি করেছে, যা প্রমাণ করে দীর্ঘদিনের গ্রাহকের স্বাভাবিক ব্যবহারের সঠিক ট্র্যাকিং ও মনিটরিংয়ে ব্যাংকের ত্রুটি রয়েছে।

এই পুরো সময়জুড়ে লক্ষ্য করেছি, সিটি ব্যাংক বারবার সমস্যাটিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ডিফাইন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোথাও নিজেদের দায়ভার, অবহেলা বা গ্রাহকসেবার ত্রুটি স্বীকার করেনি। প্রতিবারই ব্যাংকের পলিসি, কিংবা আমার বোঝার ভুল বা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিংকে দায়ী করা হয়েছে। 

অক্টোবরে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার পর ব্যাংকের এসএমএস অ্যালার্ট সংক্রান্ত ব্যাকএন্ড টিম থেকে একজন কল করে ব্যাংকের ভাবমূর্তি রক্ষার অনুরোধ জানালে আমি দায়িত্বশীল আচরণে সেই স্ট্যাটাস গুলো সরিয়ে দিই, কিন্তু বাস্তবে আমার সমস্যার সমাধানে তখন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে গুলশান হেড অফিসে তিনটি ডিপার্টমেন্ট হেডের সাথে আলোচনায় বসে তাদের সদিচ্ছা ইতিবাচক মনে হলেও, একজন গ্রাহক হিসেবে শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না, বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চাই। আজ আমার সমস্যা সমাধান হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই লেখার উদ্দেশ্য আর প্রতিবার সময় এবং শ্রম নষ্ট করে ব্যাংকের বিরুদ্ধে লিখে ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা নয়, পেশাদার দায়িত্ব থেকে প্রশ্ন তোলা, কারণ প্রথমবার জানানো হলে ব্যাংক কার্যত নীরব ছিল, আর পুনরায় লিখিত অভিযোগের পর হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ভার্চুয়াল কার্ডের মতো টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের ভুলকে ডিফাইন করার চেষ্টা করেছে।

কর্পোরেট পর্যায়ে এ ধরনের সিস্টেম জেনারেট বা আর্টিফিশিয়াল স্টেটমেন্ট দিয়ে দায় গ্রাহকের উপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে গ্রাহক আরও সচেতন, আরও স্মার্ট, এবং প্রশ্ন তুলতে জানে, তাই এখনই সাবধান হওয়াই বুদ্ধিমানের।

পরিশেষে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি নিজেও সিটি ব্যাংকের একজন গ্রাহক এবং আর্থিক বিষয়ে একজন নগণ্য কনটেন্ট রাইটার মাত্র। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার লেনদেনের পরিসর খুবই সীমিত, এবং সেই ক্ষুদ্র লেনদেনগুলোর বেশিরভাগই আমি সিটি ব্যাংকের মাধ্যমেই করার চেষ্টা করি। তাই এই লেখার উদ্দেশ্য সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে যাওয়া নয়, বরং একজন গ্রাহক হিসেবে আমার সাথে যে অসংগতি ও ত্রুটিগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, সেগুলো দায়িত্বশীলভাবে তুলে ধরা।

আমি আশা করি সিটি ব্যাংক ভবিষ্যতে এসব বিষয় থেকে শিক্ষা নেবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণ করবে। আমরা সবাই চাই দেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি আরও স্বচ্ছ, আরও জবাবদিহিমূলক এবং আরও গ্রাহকবান্ধব হোক। 

একজন কনটেন্ট রাইটার হিসেবে এটি আমার পেশা, এবং এই পেশার উপর দাঁড়িয়েই আমি প্রশ্ন তুলি, কারণ পেশাগত বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হলে আমার মতো সাধারণ কনটেন্ট রাইটারদের কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং এই ইন্ডাস্ট্রিকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করতে গঠনমূলক সমালোচনা চলমান থাকুক, এই প্রত্যাশাই করছি এবং সিটি ব্যাংকের জন্য আন্তরিক শুভকামনা রইল।


এস এম শামীম হাসান 
হোয়াটসঅ্যাপ: 01559344424
ইমেইল :shamimcorporate@gmail.com

নবীনতর পরবর্তী কনটেন্ট