কর্মী সুরক্ষা ও নেতৃত্বের সীমা | Employee Safety & Leadership Boundaries

Employee Safety & Leadership Boundaries


কর্পোরেট পরিবেশে কর্মীদের উপর ক্ষমতার প্রয়োগ, নেতৃত্বের আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানগত নীতি কখনও কখনও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য কর্পোরেট সংস্থায়, ম্যানেজার ও দায়িত্বশীলদের আচরণ কখনো কর্মীর স্বতন্ত্রতা এবং নিরাপত্তার সাথে সংঘর্ষে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের সীমা, ন্যায্যতা এবং সম্মানের গুরুত্ব অপরিসীম।

আমি নিজে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি, খুবই ছোট একটি পদে। বসদের ক্ষমতা প্রয়োগ নিয়ে আমার নিজের একটু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

কর্পোরেট পরিবেশে যারা কাজ করেন, বিশেষ করে যারা ম্যানেজার বা দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন, তারা জানেন যে অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা, টার্গেট পূরণ, কাজের মান বা ডেলিভারির চাপ কর্মীদের উপর কঠোর আচরণের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু এই জায়গাটিতেই অনেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যান, একজন কর্মীর উপর ঠিক কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত।

অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, কিছু ম্যানেজারগন নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে চারপাশে একটি চাটুকার গোষ্ঠী তৈরি করেন। এই গোষ্ঠীর বাইরে থাকা কর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত মনিটরিং, অবমূল্যায়ন এবং চাপের মধ্যে থাকেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছিল। সাধারণ ভাষায় যাকে আমরা বলি চামচাতন্ত্র।

আমি বরাবরই আমার উক্ত বসের কাছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার ছিলাম। তিনি আমার ছোট্ট একটা ইসু কে টিস্যু বানিয়ে দুমড়ে মুচড়ে পরিস্থিতি ঘোলা করে আমাকে চাকরিচ্যুত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন।

এই যাত্রায় সৃষ্টিকর্তা আমার সাথে ছিল, বসের উপরেও বস থাকে। সেই কারণেই হয়তো বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে গড়ায়নি। কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপলব্ধি ছিল ভিন্ন জায়গায়। 

এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধিতে পৌঁছেছি। যাঁকে এতদিন আমি ভয় করতাম, বাস্তবে তাঁর ক্ষমতার সীমা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। সেই মুহূর্ত থেকেই আমার ভয় অনেকটাই কেটে গেছে। কারণ তিনি আমার বিরুদ্ধে যতদূর যেতে পারতেন, তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাটিই ইতোমধ্যে প্রয়োগ করেছেন। এর বাইরে তাঁর পক্ষে আর নতুন কিছু করার সুযোগ খুব সীমিত।

এই উপলব্ধি আমাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করেছে। এখন থেকে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আমি তাঁর ক্ষমতার সীমা বিবেচনায় রেখেই সচেতনভাবে এগোতে পারব। এই অভিজ্ঞতা কেবল আমার ক্ষেত্রেই নয়, কর্মজীবনে যে কোনো কর্মীর জন্যই প্রযোজ্য হতে পারে, যখন কেউ বাস্তবে বুঝতে পারে যে ভয়ের উৎসটির ক্ষমতাও আসলে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই আবদ্ধ।

এখানে এই অভিজ্ঞতাটি শেয়ার করার উদ্দেশ্য অভিযোগ তোলা বা কারও বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নয়। বরং কর্পোরেট পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ও টিম লিডারদের প্রতি একটি বিনীত অনুরোধ জানানো। নেতৃত্ব মানে কেবল ক্ষমতা প্রয়োগ নয়, বরং দায়িত্বশীলতা, সংযম ও মানবিক বোধের সমন্বয়।

অধীনস্থ কর্মীদের উপর অপ্রয়োজনীয় কঠোরতা বা ক্ষমতার প্রদর্শন সাময়িকভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা আস্থা, সম্মান ও পেশাগত সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়। বিশেষ করে যেদিন একজন কর্মী আপনার ক্ষমতার সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যক্ষ করে ফেলে, সেদিনের পর থেকে ভয় বা শ্রদ্ধার জায়গাটি স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যায়।

একজন দক্ষ নেতা হিসেবে কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য। কারণ প্রকৃত নেতৃত্ব ভয়ের মাধ্যমে নয়, বরং বিশ্বাস ও ন্যায়সঙ্গত আচরণের মাধ্যমেই টিকে থাকে।

এসএম শামীম হাসান 
হোয়াটসঅ্যাপ : 01559344424
ইমেইল: shamimcorporate@gmail.com

নবীনতর পরবর্তী কনটেন্ট