ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম বা অন্যান্য মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে নগদ টাকা উত্তোলন করাকে ক্যাশ অ্যাডভান্স বলা হয়। এটি জরুরি মুহূর্তে দ্রুত অর্থের প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হলেও, এর বিপরীতে দিতে হয় বাড়তি চার্জ এবং উচ্চ ইন্টারেস্ট অথবা মেনটেনেন্স ফি (ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে)।
ক্রেডিট কার্ড থেকে ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি কত?
বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ভিন্ন ভিন্ন হারে ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি চার্জ করে। ক্যাশ অ্যাডভান্সের পদ্ধতি অনুসারে চার্জের পরিমাণ এবং ইন্টারেস্ট চার্জিং পলিসি ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট করে এই চার্জে পরিমাণ বলা বেশ মুশকিল। সেজন্য পরামর্শ থাকবে প্রত্যেকটা ব্যাংকের সিডিউল অফ চার্জ দেখে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কল সেন্টারে অথবা কোন অফিসিয়াল স্টাফ এর সাথে যোগাযোগ করে সঠিক তথ্যটি জেনে নেওয়ার জন্য।
সাধারণ ভাবে ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম বুথ এর মাধ্যমে উত্তোলনের জন্য চার্জ হার ২.৫% – ৪% এবং ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত মিনিমাম চার্জ হয়ে থাকে।
অধিকাংশ ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং চ্যানেল বা ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য ১ থেকে ৩ শতাংশ হারে ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি আদায় করে থাকে। তবে ব্যাংকগুলো মিনিমাম চার্জ নির্ধারণ করে দেয়। যার ফলে গ্রাহক ছোট কোন লেনদেন করতে হলে তাকে বড় অ্যামাউন্ট এর ফি প্রদান করতে হয়।
এটিএম উত্তোলনে কোনো গ্রেস পিরিয়ড নেই
সাধারণ ক্রেডিট কার্ড লেনদেন যেমন ১৫-৫০ দিনের ইন্টারেস্ট ফ্রি সময় (Grace Period) পাওয়া যায়, তবে উল্লেখ্য যে এটিএম বুথ থেকে ক্যাশ অ্যাডভান্সে ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড সুবিধা নেই। টাকা তোলার দিন থেকেই ইন্টারেস্ট গণনা শুরু হয়।
গ্রেস পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন.....
ক্রেডিট কার্ডের ক্যাশ অ্যাডভান্স এর ইন্টারেস্ট হার
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ক্রেডিট কার্ডের ইন্টারেস্ট হার বাৎসরিক ২০%, যে মাসিক হিসেবে ১.৬৭%, এবং দৈনিক হিসেবে প্রতি হাজারে প্রতিদিন ৫৬ পয়সা। তবে ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে আউটস্ট্যান্ডিং এর স্লট অনুযায়ী মেনটেনেন্স ফি প্রযোজ্য হবে।
ইসলামিক ও কনভেনশনাল উভয় কার্ডে ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি প্রযোজ্য। ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডে এই চার্জটি দেখানো হয় “ইনভেস্টমেন্ট ফি” বা “ক্যাশ ফাইন্যান্সিং ফি” ইত্যাদি নামে । তবে ইসলামিক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট এর পরিবর্তে টোটাল আউটস্ট্যান্ডিং এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্লটে মাসিক মেইনটেন্স ফি কাটা হয় ।
সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য সাশ্রয়ী বিকল্প কোনগুলো?
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ করে এটিএম থেকে ক্যাশ অ্যাডভান্স না নিয়ে এই বিকল্পগুলো বেছে নিন:
ব্যাংক ট্রান্সফার ও ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন করুন। এটিএম এর চাইতে খরচ কিছুটা কম হতে পারে। তবে আর কিছু কিছু ব্যাংকে তা নাও হতে পারে। কিন্তু এখানে ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড পিরিয়ড পাওয়া যাবে।
ক্রেডিট কার্ডের টাকা চেক ব্যবহার করার মাধ্যমে সরাসরি নগদ উত্তোলনের সুযোগ নেই। কারণ এখনো পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের জন্য অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেক ইস্যু করে। তাই বিশেষ প্রয়োজনে অন্যের একাউন্ট ট্রান্সফার বা ক্লিয়ারিং করে অর্থ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে কেবল ইন্টারেস্ট ফ্রি সুবিধাটি ছাড়া চার্জের ক্ষেত্রে কোন এক্সট্রা বেনিফিট পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ এখানেও চেক প্রসেসিং ফি রয়েছে।
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক নগদ টাকা উত্তোলন খুব ভালো একটি পদ্ধতি হলেও এখানেও স্বস্তি নেই। প্রথমত আপনি এমএফএস ওয়ালেট গুলোতে যে অর্থ এডমানি করছেন তা ক্যাশ আউট করতে সর্বাধিক ২% ব্যয় করতে হবে উক্ত ওয়ালেটের ক্যাশ আউট ফি বাবদ। শুধু এখানেই শেষ নয়, ব্যাংক আপনাকে আবার অতিরিক্ত ওয়ালেট লোডিং ফি নামে বর্তমানে ১% হারে সাথে ১৫% ভ্যাট তো আছেই। সব মিলিয়ে এজন্য গ্রাহকের গলার কাঁটা। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো হচ্ছে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, ট্যাপ, শিওর ক্যাশ, মেঘনা পে, পকেট ইত্যাদি।
ওয়ালেট লোডিং ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন......
সুতরাং, ক্যাশ অ্যাডভান্স হল সর্বশেষ বিকল্প, যখন আর কোনো অপশন হাতে নেই, জরুরি প্রয়োজনে কেবল তখনই এই সুবিধাটি নিতে পারেন। না হলে এটি আপনাকে বাড়তি খরচের জালে ফেলতে পারে।
